যেকোনো ধরনের রান্না করতে গেলেই যে উপাদানটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়, তা হচ্ছে তেল। রান্নার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল ব্যবহার করে থাকি। তার মাঝে কিছু আছে ভেজিটেবল অয়েল যেমন- সয়াবিন তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি। তেমনি বিভিন্ন ফল থেকে প্রাপ্ত তেল ও রান্নার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো অয়েল ইত্যাদি । কিন্তু বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা রকম বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয় যাতে রান্নার সময় তাপমাত্রার কারণে সেই তেল এর রাসায়নিক উপাদানগুলো কোনভাবে ভেঙে না যায় এবং রান্নার পুষ্টিগুণ যাতে বজায় থাকে।

তাহলে আজকে জেনে নেওয়া যাক, তেল দিয়ে রান্না করার ক্ষেত্রে তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ব্যাপারটা কি। সহজভাবে বলতে গেলে আমরা যখন কোন ভাজাপোড়া বা রান্নার কাজে তেল গরম করে থাকি তখন যে তাপমাত্রায় সেই তেলটি গরম হয়ে ধোয়া বাষ্পে পরিণত হওয়া শুরু করে তাকে স্মোকিং পয়েন্ট বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই স্ফুটনাংক বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। 

এখন বিষয়টা হচ্ছে সাধারণত গৃহস্থালি রান্নাবান্না করার ক্ষেত্রে আমরা অতিরিক্ত তাপমাত্রার ব্যবহার করি না। সাধারণ রান্নার ক্ষেত্রে স্মোকিং পয়েন্ট ব্যাপারটি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করে না কিন্তু যখন আমরা উচ্চ তাপমাত্রায় কোন খাবার প্রস্তুত করি যেমন - মাংস ভাজা-পোড়া অথবা বিভিন্ন স্ন্যাকস কে ডিপ ফ্রাই করা- সে ক্ষেত্রে স্মোকিং ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হয়।

কোনো তেলকে যদি অতিরিক্ত গরম করা হয়, তখন স্মোকিং পয়েন্ট অতিক্রম করার পর সাধারণত সেটির বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলো ভাঙতে বা নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বা খাবারের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে পরিণত হতে পারে। তাই অতিরিক্ত তাপমাত্রায় কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে এমন তেল ব্যবহার করতে যার স্মোকিং পয়েন্ট সাধারণত একটু বেশি হয়ে থাকে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রায় যাতে তেলটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় পাই।

একটি সহজ উদাহরণ দিলে ব্যাপারে বোঝা যাবে, সাধারণত রান্না বান্নার ক্ষেত্রে আমরা চাইলেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি কিন্তু যখন আমরা উচ্চ তাপমাত্রায় কোন ভাজাপোড়া বা ডিপ ফ্রাই এর কাজ করব তখন আমাদের অলিভ অয়েল এর পরিবর্তে বিভিন্ন হাই স্মোকিং পয়েন্ট যুক্ত তেল যেমন - সয়াবিন অয়েল বা অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার করা উচিত।

এই লিংক থেকে আপনারা জেনে নিতে পারবেন যে আমাদের ব্যবহৃত সাধারণ তেলগুলোর মাঝে কোন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট কত। এই স্মোকিং পয়েন্ট নিয়ে তথ্য জানা থাকলে আপনারা সহজেই রান্নার ক্ষেত্রে স্মোকিং পয়েন্টের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন কেননা এর মাধ্যমেই আপনি আপনার খাবারটিকে স্বাস্থ্যকর রাখতে পারেন।

দিন দিন ওভেন এর চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমরা অনেকেই বেশ কিছু সাধারন রান্না এখন ওভেন এ করার চেষ্টা করে থাকি। সেসব রান্নাটি একটি হচ্ছে চিকেন বা মুরগির মাংস ওভেনে রান্না করা। কিন্তু সাধারণত চুলায় রান্নার পরিবর্তে ওভেনে মুরগির মাংস রান্না করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখা উচিত।

এখানে মূল বিষয় হলো মুরগির দেহের বিভিন্ন অংশের মাংস রান্না হতে বিভিন্ন রকম তাপমাত্রা এবং বিভিন্ন রকম সময় লেগে থাকে। আমরা যখন চুলায় সাধারণত কোন পাত্রে মুরগির মাংস রান্না করে থাকি তখন তা অত্যন্ত দীর্ঘ সময় যাবত চুলাতে থাকে। এবং আমরা সময় সময়ে ইচ্ছা করলেই একটু মাংস তুলে নিয়ে দেখে নিতে পারি মাংস সঠিকভাবে রান্না হয়েছে কিনা। কিন্তু ওভেনে মাংস রান্নার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি ততটা সহজ নয়। তাই ওভেনের তাপমাত্রা এবং সময় এর ব্যাপারটি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

আরও সহজভাবে বলতে গেলে মুরগির মাংসের কিছু অংশ থাকে লাইট মীট (light meat) বা হোয়াইট মীট (white meat), এবং কিছু মাংস থাকে ডার্ক মীট (dark meat). এই হোয়াইট মীট অংশ রান্না হতে তুলনামূলক কম সময় লাগে এবং ডার্ক মীটের অংশগুলো রান্না হতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে মাংসের গঠনগত পার্থক্যের জন্য। 

এ ব্যাপারটি সমাধান করার জন্য দুইটি কাজ করা যেতে পারে আপনি যখন ওভেনে আস্ত মুরগী রান্না করবেন তখন অবশ্যই মুরগির মাংস ডিম রান্না হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় অনুযায়ী বেকিং করে থাকবেন। কিন্তু যদি আপনি ডার্ক মীট এবং হোয়াইট মীট আলাদা ভাবে রান্না করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি সহজেই মানুষের ধরন অনুযায়ী ওভেন এ তাপমাত্রা এবং সময় পরিবর্তন করে ফেলতে পারবেন।

এক্ষেত্রে একটি নিয়ম অনুসরণ করতে হয় যা হচ্ছে বেকিং এর মাধ্যমে মুরগির মাংস প্রস্তুত করতে হলে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে মুরগির মাংসের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা যেন ১৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর বেশি হয়ে থাকে। কারণ হচ্ছে ১৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট মুরগির মাংস রান্নার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তাপমাত্রা এবং কোনভাবেই ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম তাপমাত্রায় প্রস্তুতকৃত মুরগির মাংস আমাদের খাওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ নয়। 

তাই আপনি আস্ত মুরগির মাংস একসাথে ওভেনে রান্না করুন, আর আলাদা আলাদা ভাবে রান্না করুন না কেন, অবশ্যই নিশ্চিত রাখতে হবে মাংসের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা যেন ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়ে থাকে।

বেকিং এর মাধ্যমে তৈরি করা খাবার গুলোর মাঝে কেক হচ্ছে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিশেষ করে জন্মদিন এর ক্ষেত্রে কেক একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। তাহলে আসুন দেখে নেওয়া যাক এই কেক তৈরীর ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখলে সহজেই আপনি আপনার কেকের মান বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং একটি সুন্দর টেক্সচার বজায় রাখতে পারবেন।

ময়দা

ময়দার কেক তৈরি করার সময় প্রথমেই যে উপাদানটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে ভালো মানের ময়দা। ময়দা নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনার বাছাই করা ময়দা যাতে ভালো মানের হয় এবং বেশি পুরাতন না হয়। কারণ বেশি পুরাতন হলে অনেক সময় দেখা যায় ময়দার জায়গায় জায়গায় জমাট বেঁধে যায় এবং সেগুলো টেক্সচারে ধরা পরে এবং কেকের টেক্সচারকে অনাকাঙ্ক্ষিত করে ফেলে। তাই অবশ্যই ভালো মানের পরিষ্কার ময়দা ব্যবহার করতে হবে এবং যদি ময়দা কোন কারণে পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তা ছেঁকে নিতে হবে।

ডিম 

ডিম ব্যবহার করার ব্যাপারে কখনো কখনো সম্পূর্ণ ডিম ব্যবহার করতে হয় এবং কখনও কখনও ডিমের শুধু কুসুম অথবা শুধু সাদা অংশে ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি যে ধরনের ব্যবহার করছেন সেই অনুযায়ী ডিম নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত আপনার কেকে যদি মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করা শ্রেয়। কিন্তু আপনার কেকের মাঝে যদি ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে বা মাখনের পরিমাণ কম থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডিমের কুসুম ব্যবহার করতে হবে। কারণ ডিমের কুসুম নিজেও একটি ফ্যাটের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং সবমিলিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চিনি 

বাজারের বিদ্যমান চিনি গুলোর মাঝে দুই ধরনের চিনি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এক হচ্ছে ব্রাউন সুগার (Brown Sugar) এবং অপরটি হোয়াইট সুগার (White Sugar)। কেক তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত হোয়াইট সুগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে কারণ হচ্ছে হোয়াইট সুগার এর তুলনায় ব্রাউন সুগার অনেক বেশি ঘন প্রকৃতির হয়। সেজন্য কেকের মোলায়েম টেক্সচার বজায় রাখার জন্য ব্রাউন সুগার ব্যবহার করা হয় না। তার পরিবর্তে ভালোমানের  হোয়াইট সুগার ব্যবহার করতে হয়। আরও ভালো ফলাফল পেতে কেক তৈরীর সময় সুন্দর টেক্সচার বজায় রাখতে আপনি হোয়াইট সুগারের প্রক্রিয়াজাতকৃত ধরন ব্যবহার করতে পারেন যা সাধারণতঃ বেকিং সুগার বা আইসিং সুগার নামে পরিচিত। এখানে খেয়াল রাখতে হবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইসিং সুগার মিহি চিনির দানার পাশাপাশি এক ধরনের স্টার্চ  বিদ্যমান থাকতে পারে তাই কেনার পূর্বে অবশ্যই সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে।

মাখন বা তেল 

কেক তৈরির ক্ষেত্রে ফ্যাট এর উৎস হিসেবে মাখন বা তেল ব্যবহার করতে হয়। এদের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে মাখনে ফ্যাট এর পাশাপাশি বিভিন্ন মিলক সলিডস্‌ বিদ্যমান থাকে যেগুলো বেশি তাপমাত্রায় পুড়ে যেতে পারে এবং পুড়ে বাদামি বর্ণ ধারণ করতে পারে। তাই আপনার কেকের আকৃতি অনুযায়ী এবং কেমন তাপমাত্রায় কেকটি তৈরি করবেন সেই অনুযায়ী আপনাকে মাখন বা তেলের মাঝে একটি বাছাই করতে হবে 

ওভেন সেটিংস 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেক তৈরি করার জন্য ইলেকট্রিক ওভেন বা গ্যাস ওভেন ব্যবহার করা হয়। বাজারে বিদ্যমান যে ওভেনগুলো আছে সেগুলোর অধিকাংশের উপরিতলে একটি গ্রিল সেটিংস বিদ্যমান থাকে। সাধারণত কেক ব্যবহার করার সময় এই গ্রিল সেটিংস টা অফ করে নিতে হয় কারণ হচ্ছে গ্রিল এর ব্যবহার করলে কেকের উপরিভাগে একটি বাদামি আস্তরণ পড়তে পারে।

এই কৌশলগুলো অনুসরণ করলে সহজেই মানসম্মত কেক তৈরি করতে পারবেন এবং কেক এর আকর্ষণীয় টেক্সচার বজায় রাখতে পারবেন।

আমরা যারা বেকিং করে থাকি অথবা বেকিং শুরু করতে যাচ্ছি তাদের অনেকেরই একটি ইচ্ছা থাকে - নিজ হাতে বিভিন্ন ধরনের কুকিজ বেক করতে পারা এবং কুকিজ মেকিং এর ক্ষেত্রে একটিবারও পারদর্শিতা লাভ করা। 

তাহলে দেখে নেওয়া যাক কুকিজ বেকিং এর ব্যাপারে কিছু টিপস যেগুলো আমাদের সবসময় মনে রাখা দরকার এবং এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই কুকিজ বেকিং এ পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবেন।

কুকিজ বেকিং এর সময় চিনি নিয়ে আমরা অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারি। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আপনি মনে রাখতে পারেন তা হচ্ছে আপনি যদি চান আপনার কুকিজ গুলো একটু কেক টাইপের টেক্সচার পাক তাহলে আপনাকে আপনি অবশ্যই ব্রাউন সুগার ইউজ করতে হবে। আর আপনি যদি তুলনামূলক মচমচে কুকিজ বেক করতে চান তাহলে আপনি হোয়াইট সুগার ব্যবহার করতে পারবেন। এতে বিদ্যমান মোলাসেস উপাদানটির জন্য এদের দ্বারা তৈরি কুকিজ গুলো একটু সফট হয়ে থাকে এবং টেক্সচার অনুযায়ী কুকিজ গুলো একটু কেক ধরনের হয়ে থাকে বা নরম হয়ে থাকে।

ডিম 

কুকিজ তৈরীর ক্ষেত্রে ডিম একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এখন অনেকেই চিন্তা করে থাকতে পারেন যে, কোনো কারণে যদি ডিম কম হয়ে যায় বা বেশি হয়ে যায় তাহলে কুকিজ কি পরিমাণ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন ডিম শুধুমাত্র কুকিজ নয়, কেক বেক করার সময়ও ডিম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই কোনো কারণে যদি আপনার কুকিজ এ ডিমের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তাহলে অতিরিক্ত ডিমের কারণে আপনার কুকিজ গুলো অনেকটা কেকের মতো টেক্সচার পেয়ে যাবে। আর যদি কোনো কারণে ডিম কম হয়ে যায় তাহলে আপনার কুকিজগুলো একদম শুষ্ক ধরনের এবং শক্ত ধরনের হয়ে যেতে পারে।

ময়দা 

বেক করার সময় সাধারণত আমরা সচরাচর যে ময়দা ব্যবহার করে থাকি সেটা ব্যবহার করলেই হয়ে যায় যেটাকে অল পারপাস ফ্লাওয়ার নামে অভিহিত করা হয়। খেয়াল রাখতে হবে কুকিস বেক করার সময় আপনি যে রেসিপি ফলো করছেন সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সূক্ষ্মভাবে যাতে আপনি ময়দার পরিমাপ করে নিতে পারেন। যদি আপনার ময়দা একটু পুরনো হয়ে থাকে তাহলে ব্যবহারের পূর্বে ময়দাটা ছেঁকে নিয়ে মিহি করে নিলে সুবিধা হবে।

মাখন বা তেল 

বেকিং করার ক্ষেত্রে অনেক সময় একটি প্রধান উপাদান হিসেবে মাখন ব্যবহার করা হয়ে থাকে কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাখন এর পরিবর্তে তেল ব্যবহার করা যায়। কিন্তু কুকিজ তৈরি করার সময় ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে যে, মাখনে ফ্যাট ছাড়াও বিভিন্ন মিল্ক সলিডস বিদ্যমান থাকে যেগুলো আপনার কুকিজের টেক্সচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে শুধুমাত্র তেল ব্যবহার করলে মিল্ক সলিডস গুলোর অনুপস্থিতির কারণে আপনার কুকিজের টেক্সচার অতটা ভালো হবে না।  

উপরোল্লিখিত টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই নিজ হাতে বেশ ভালো মানসম্মত এবং টেক্সচার বজায় রেখে কুকিজ বেক করতে পারবেন।

আমরা যারা বিভিন্ন খাবার বেক করে থাকি কিংবা বেকিং শুরু করার চেষ্টা করছি তাদের অনেকের মাঝেই একটা প্রশ্ন জাগতে পারে। সেটি হলো বেকিং এর ক্ষেত্রে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওভেন বিদ্যমান। কিন্তু, এদের মাঝে কোনগুলো বেকিং এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত?

আসুন দেখে নেওয়া যাক বাজারে বিদ্যমান ওভেন গুলোর মাঝে মূল পার্থক্য গুলো কি কি এবং কোন ওভেন বেকিং এর জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।

বাজারের বিদ্যমান ওভেন গুলোর মাঝে প্রধানত তিনটি প্রকারভেদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সেগুলো হচ্ছে - মাইক্রোওয়েভ, ইলেকট্রিক এবং গ্যাস ওভেন। সাধারণত ইলেকট্রিক ওভেন এবং গ্যাস ওভেন বেকিং এর জন্য বেশি উপযুক্ত এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেন বেকিং এর পরিবর্তে খাবার গরম করার ক্ষেত্রে বা রান্না করার ক্ষেত্রে বেশি উপযুক্ত। এখন দেখে নেয়া যাক এদের মাঝে মৌলিক পার্থক্য গুলো কি কি এবং কেন ইলেকট্রিক গ্যাস ওভেন বেকিং এর জন্য ভালো।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার এর ক্ষেত্রে এর মাঝে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং এটি খাবারকে ভেদ করে বিচরণ করতে থাকে। এর ফলে খাবারের অণুগুলোর মাঝে এক ধরনের কম্পন বা অনুরণন সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে খাবারের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে খাবার গরম করা বা রান্না করা অত্যন্ত সহজ এবং কম সময়ে সাধ্য হয়। মাইক্রোওভেন সাধারণত বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এতে সময় নির্ধারণ করে দিয়ে এই ওভেন ব্যবহার করা যায়। 

অন্যদিকে ইলেকট্রিক ওভেন বা গ্যাস ওভেনে যা হয় তা হচ্ছে এই ওভেনগুলোতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একধরণের গ্রিল সিস্টেম থাকে যা কাঙ্খিত তাপমাত্রা অনুযায়ী ওভেনের ভেতরের অংশকে এবং সে অংশে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ  বাতাসকে গরম করে। যার ফলে পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেখানে থাকা খাবার ধীরে ধীরে গরম হয়ে যায়। এতে করে সেখানে কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রা পর্যন্ত পৌঁছায় এবং এ কারণে গ্যাস ওভেন বা ইলেকট্রিক ওভেনে খুব সহজেই তাপমাত্রা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সময় নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। আবার কখনো কখনো কনভেকশন প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রার সঞ্চালনের জন্য এক ধরনের অভ্যন্তরীণ ফ্যান ব্যবহার করা যায় যা খাবারটি কে পরিমিতভাবে  তাপমাত্রা সরবরাহ করে এবং তাপ সঞ্চালন করে খাবার তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, ইলেকট্রিক গ্যাস ওভেনে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে এবং সময় নির্ধারণ করা যাচ্ছে খুব সহজেই। 

বেকিং এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হচ্ছে, খাবার বেক করার ক্ষেত্রে ওভেন এর তাপমাত্রা এবং সময় নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

যার ফলে খাবার বেক করার ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক বা গ্যাদ ওভেনগুলোই বেশি উপযুক্ত। অন্যদিকে মাইক্রোওয়েভের প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে খাবার গরম করার ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহারই শ্রেয়।

ডিম হচ্ছে আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারগুলোর একটি। শুধুমাত্র পুষ্টির দিক থেকে নয় ব্যবহারের বিভিন্ন প্রকার দিক থেকেও ডিমের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র এবং তারই মাঝে সবচেয়ে সহজ একটি প্রক্রিয়া হল ডিম সিদ্ধ করা।

যখন আপনার হাতে সময় কম থাকে বা আপনি বেশি ঝামেলায় পড়তে চান না তখন খুবই অল্প সময়ের মাঝে একটি ভালো ডিম সিদ্ধ করে ফেললে সেটা সহজেই যেকোন কিছুর সাথে খেয়ে ফেলা যায়। কিন্তু ডিম সেদ্ধ করার ব্যাপারে ছোট কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত যে গুলো এড়িয়ে চললে আপনি সঠিকভাবে এবং ডিমের পুষ্টি বজায় রেখে সহজে ডিম সিদ্ধ তৈরি করতে পারবেন।

প্রথমত আপনার ডিম যদি ফ্রিজ এ থেকে থাকে তাহলে তা বের করে সাথে সাথে সিদ্ধ করতে দেওয়া উচিত নয়। কিছুক্ষণ সময় ডিমের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রুম টেম্পারেচার এ চলে আসার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।

দ্বিতীয়ত ডিম সেদ্ধ করার ব্যাপারে কখনোই ফুটন্ত গরম পানিতে ডিম ছাড়বেন না। বরং ঠান্ডা পানিতে ডিম ছেড়ে তারপর সেটি চুলার মাঝে দিয়ে গরম করবেন। যাতে ডিমটি পানির সাথে সাথে ঠান্ডা থাকে ধীরে ধীরে গরম হতে পারে। অনেক সময় গরম বা ফুটন্ত পানিতে হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে ক্ষণিকের মাঝে তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য ডিম ফেটে যেতে পারে যার মাধ্যমে আপনার ডিম সেদ্ধ করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।

তৃতীয়ত ডিম সিদ্ধ করার পর ডিমের খোসা ছাড়ানো পরে প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে খুব ছোট্ট একটি বিষয় অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজে ডিমের খোসা ছাড়াতে পারবেন। তা হলো আপনি যখন ডিম সিদ্ধ করবেন তখন পানিতে অল্প একটু বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাইকার্বনেট) ছেড়ে দিতে পারেন। এই বেকিং সোডা ডিম সেদ্ধ করে পানিতে মেশানো থাকলে তার ডিমের বাইরে আস্তরণকে যাতে সহজে ছাড়ানো যায় সে ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে।

চতুর্থত অনেক সময় ডিমের খোসা ছাড়ানোর সময় আমরা দেখতে পারি ডিমের সাদা অংশ এবং ডিমের খোসার মাঝে একটি পাতলা চামড়ার মত পর্দা বিদ্যমান থাকে। অনেক সময় তাড়াহুড়া বসত আমরা এই পদ্ধতিকে রেখে দেই এবং খোসার সাথে ফেলে দিই না এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ডিমের খোসা ছাড়ানোর সময় অবশ্যই এ পাতলা পর্দাটি খেয়াল করে উঠিয়ে ফেলতে হবে। কারণ এই পাতলা পদ্ধতি মূলত হচ্ছে ডিমের খোসার একটি অংশ এবং যা খাবারের সাথে গ্রহণ না করায় শ্রেয়।

পঞ্চমত ডিম সেদ্ধ ব্যাপারে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে এটি বোঝার একটি সহজ উপায় আছে। তা হলো আপনি পানিতে ডিম রেখে তা চুলে ছড়িয়ে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে পানিটি যখন ফুটতে থাকবে তার চার থেকে পাঁচ মিনিট পর আপনি তাপমাত্রা বন্ধ করে দিবেন। তারপর-

এই তিন ধরনের সময় অনুযায়ী আপনি তিন ধরনের ডিম সেদ্ধ তৈরি করতে পারবেন।

আমরা যারা বিভিন্ন ধরনের ব্রেড বা পাউরুটি ওভেনে তৈরি করে থাকি তারা অনেক সময় যে কাজটি করে থাকি তা হচ্ছে ব্রেড তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তার উপরিভাগে বাটার বা তেল দিয়ে হালকা একটি আস্তরণ দিয়ে দিই যেটাকে বাটার ব্রাশ বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই কাজটি করা কতটা প্রয়োজনীয় এবং করলে কতটুকু সুবিধা হয়ে থাকে? আসুন জেনে নেওয়া যাক। 

সাধারণত ব্রেড তৈরীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে উপাদানগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে তা হচ্ছে ভালো মানের ময়দা, ইস্ট, পানি এবং ফ্যাট হিসেবে তেল অথবা বাটার এবং স্বাদের জন্য লবণ এবং চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওভেনে বেক করলে যা হয় তা হচ্ছে ওভেনের ভেতরের তাপমাত্রা জন্য ব্রেডের চতুর্দিকে বাহ্যিক যে স্তর থাকে তা ভেতরের অংশের চেয়ে কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। ব্যাপারটি দেখতে সুন্দর হলেও বেশ খানিকক্ষণ ব্রেড রেখে দেওয়া হলে একসময় এসে আবরণটি তুলনামূলক বেশি শক্ত হয়ে যায় এবং যা ব্রেডের টেক্সচার কে নষ্ট করে দিতে পারে। 

ব্রেড তৈরির পর যখন ওভেন থেকে বের করা হয়, যদি তার কিছু মুহুর্তের পর ব্রেডের উপরিভাগে বাটার বা তেলজাতীয় কোন ফ্যাট ব্রাশ করে দেয়া হয়, তাহলে গরম অবস্থা থেকে ব্রেডটি যতটাই ঠান্ডা হতে থাকে, সেই ব্রাশ করা বাটার বা তেল পর্যায়ক্রমে শোষণ গতে থাকে। ফলে দেখা যায়, ব্রেড এর বাইরে যে আবরণটি আছে তা তুলনামূলক মূল্যায়ন থাকে এবং সব মিলিয়ে ব্রেডের টেক্সচারটিও খুব সুন্দরভাবে বজায় থাকে।

আপনি যদি কোনো কারণে বারবার তেল ব্রাশ না করে থাকেন তাহলে আপনার ব্রেড ততটাই ঠান্ডা হতে থাকবে ততই বাহ্যিক আবরণটি শক্ত হয়ে যেতে থাকবে এবং আপনার ব্রেডের টেক্সচারটি তুলনামূলক কম আকর্ষণীয় হয়ে যাবে। তাই সর্বদা চেষ্টা করা উচিত ওভেনে ব্রেড তৈরি করার পর অবশ্যই তেল বা বাটার দ্বারা ব্রেড এর বাহ্যিক অংশগুলো যেন ব্রাশ করে দেওয়া হয়।